সূচনা : জাতীয় পতাকা একটি দেশ ও জাতির স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতীক। দেশ ও জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি, আশা-আকাঙক্ষা, ধ্যান-ধারণা, আদর্শ ও লক্ষ্য প্রভৃতি জাতীয় পতাকার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়।
বিশ্বের প্রতিটি জাতিরপৃথক পৃথক জাতীয় পতাকা আছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা, আশা ও আকাঙক্ষা, সংগ্রাম, গৌরব ও স্বাধীনতার প্রতীক আমাদের জাতীয় পতাকা।
মাপ : বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা একটি সুপরিকল্পিত ধারণার রূপায়ণ।আয়তাকার এই পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হতে হবে ১০:৬। তবে, পতাকার জমিনের গাঢ় সবুজ বর্ণের মধ্যে একটি লাল বৃত্ত অঙ্কিত।
ইউনিট এবং বাম দিক থেকে চার ইউনিট রেখে একটি লম্ব টানতে হবে। প্রস্থকেসমান দু'ভাগে ভাগ করে একটা সমান্তরাল সরল রেখা টানলে উভয় রেখা যেখানে একে অপরকে ছেদ করে সেখানে বৃত্তটির কেন্দ্রকিন্দু হবে।
তাৎপর্য : আমাদের জাতীয় পতাকার সবুজ জমিন ও লাল বৃত্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সবুজের দেশ।
এই দেশের প্রকৃতিতে সর্বত্র গাঢ় সবুজের সমারােহ। সবুজ রং তারুণ্যের প্রতীক, জীবন ও যৌবনের প্রতীক। সংগ্রাম ও বিপ্লবের প্রতীক চিত্তকর্ষক লাল রং বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র গণমানুষের রক্তক্ষয়ী রাষ্ট্র বিপ্লব অথবা যে-কোনাে গণ-অভ্যুত্থান এবং লাল রং প্রায় সমার্থক হয়ে পড়েছে। আমাদের জাতীয় পতাকার সবুজ রং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের এবং স্বাধীনতার প্রাণস্পন্দনে যৌবনের নব-উন্মেষ ও কর্মাচঞ্চল্যের প্রতীক।
জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম : জাতীয় পতাকা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন জাতীয় সম্পদ। দেশ-বিদেশে আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে সগৌরবে ঘােষণা করে এই পতাকা। তাই যেখানে সেখানে যখন তখন পতাকা ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কতকগুলাে নিয়ম আছে। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস এবং অন্য কোনােদিক সরকারের বিজ্ঞপ্তি দিলে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ওড়াতে হয়। শহীদ দিবস ও শােক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে ওড়াতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ওঅফিসে কাজের দিনগুলােতে অফিস চলাকালীন জাতীয় পতাকা উড্ডীন রাখতে হয়। রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিমণ্ডলী, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাস প্রধানে, সরকারি বাসভবনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন করতে হয়। তাঁরা যানবাহনে চলাকালে তাঁদের যানবাহনেও জাতীয় পতাকা উড্ডীন রাখতে পারেন।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলের উচিত জাতীয় পতাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা ও থাকে সম্মান করা।
উপসংহার : আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এই পতাকার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে আমরা প্রাণ দিয়ে ভালােবাসি। এ পতাকার মান আমরা রাখবই। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের গর্ব, সম্মান ও আমাদের শক্তি।