ভূমিকা : পৌষ ও মাঘ শীতকাল। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি দিন ছৌট হয়ে আসে। সকাল-সম্ধ্যায় শিশির পড়ে সন্ধ্যায় গা শিরশির করে। তখনই শীতকালের সূচনা। অগ্রহায়ণ মাসের পর পৌষ মাসে তাে শীত এসেই পড়ে। মাঘ মাসে পূূূর্ণভাবে শীতকাল আসে।
শীতকাল: শীতের রাতে আর খালি গায়ে শােয়া যায় না। চাদর কি কম্বল গায়ে দিতে হয়। এই সময় বাংলাদেশে নতুন শােভা হয় বিস্তৃত নীল আকাশে এক ফোঁটা মেঘ থাকে না। আকাশ তখন কত বড় আর দূরে দূরে ছড়ানাে। দুপুরবেলা বৈশাখের খরা আর থাকে না। এসময় রােদ সুমিষ্ট, মাঠঘাট বড় শান্ত মনে হয়। শীতকালে নদীর পানি কমে যায়। নদীর দু'পাশে, বালির চর পড়ে। তখন নৌকার যাতায়াত কম হয়, ছােট খাল বিলে রীতিমতাে পানি থাকে না। এ সময় জেলেরা খুব ব্যস্ত থাকে ও প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। শীতকালে কই, মাগুর, চিংড়ি, চিতল, ফলুই, চাদা ইত্যাদি মাছ প্রচুর পাওয়া যায়। শীতকালে খাওয়া দাওয়ায় নতুন বৈচিত্র্য আসে। এ সময় গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরবার উপক্রম করে। চারদিক তাই বড় স্নান দেখায়। সকালে কুয়াশা পড়ে। গাছপালার রং তেমন খােলে না। কিন্তু শীতকালে শাক সবজিতে ক্ষেত ভরা থাকে। বাঁধাকপি, ওলকপি, ফুলকপি, মটরশুঁটি, টমাটো, কগুন ও আলু শীত মৌসুমের সবজি। লাল শাক, লাউ শাক প্রভৃতি শীতকালে প্রচুর ফলে আর ফোটে নানা রঙের ফুল। সূর্যমুখী ফুল সূর্যের চোখে চোখ রেখে সারা দিন কেমন করে ঘােরে তা দেখার মতাে ব্যাপার। শীতকালে ফোটে অনেক রকম গাঁদা ফুল। গাঁদা ফুল বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। তাছাড়া মােরগ, জবা, বক, ডালিম, জাফরান গােলাপ, কুন্দ ও ডালিয়া প্রভৃতি ফুল এ সময় বেশি ফোটে।
শীতকালে হলুদ সর্ষে ফুল বাংলার ফসলের মাঠ আলােকিত করে রাখে। এ সময় পাকা ধানের সােনালি আভা, আর ধান গাছের লালচে রূপ মন কাড়ে। ধান ক্ষেতে বাতাস বয়ে গলে, পাকা ধানের ঝলমলে মৃদু আওয়াজ বড় মধুর লাগে। শীতকালে খুব পরিশ্রম করা যায়। সহজে দেহ ক্লান্ত হয় না। আমাদের মতাে গরিব দেশে শীতকালে খুব আকাঙ্কিতও নয়। কারণ সকলের গায়ে গরম কাপড় পরার সামর্থ্য থাকে না। লেপ আর কয়জন যােগাতে পারে? ছেঁড়া কাথা গায়ে দিয়ে গ্রামের শতকরা আশি জনের শীত কাটে। এ জন্য তখন নানা রােগ দেখা দেয়। সর্দি কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। তবে শীত প্রকৃতি নতুন রূপ মনে আমেজ জাগায়। এসময় ভাপাপিঠা আর খেজুরের রস আর নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি পিঠা খেতে ভালাে লাগে। তবে, গরম কাপড় থাকলে শীতের মতাে মনােরম ঋতু আর নেই।